আপনারা নিশ্চয়ই চীনের লি ওয়েনলিয়াং-এর কথা জানেন। যখন করোনাভাইরাসের কথা কেউই জানতো না, তখনই উহানের এই ডাক্তার নিজের সহকর্মীদের এই রোগের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি প্রকাশ্যেই এই রোগ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। এতবড় পাবলিক সার্ভিসের জন্য যাকে পুরষ্কৃত করা উচিৎ ছিল, তাকে বরং ইন্টারনেটে গুজব ছড়ানোর জন্য পুলিশ দিয়ে ডাকিয়ে এনে শাসানো হয়। পরে ওয়েনলিয়াং-ই সত্য প্রমাণিত হন৷ তিনি মারাও যান করোনাভাইরাসে। কিন্তু এর ফল হয়েছে অত্যন্ত বিপজ্জনক। করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের কোনো বক্তব্যই আর বিনাবাক্য ব্যায়ে বিশ্বাস করেনি মানুষ। শত শত গুজব আর ষড়যন্ত্র তত্ব ছড়িয়েছে, যা সরকার বন্ধ করতে পারেনি।

কয়েক দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েনলিয়াং-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে তাকে নিষ্কৃতি দেওয়া হয়েছে৷ চীনের সরকার কান ধরে তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
সহযোগী অধ্যাপক মলয় কান্তি মৃধা হলেন আমাদের লি ওয়েনলিয়াং। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরে শিক্ষক ও বিশ্বখ্যাত জন্স হপকিন্সের দুই জনস্বাস্থ্য গবেষককে নিয়ে পূর্বাভাষ করার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশে সরকার যদি কোনো পদক্ষেপই না নেয়, তাহলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
এক্ষেত্রে তারা সংক্রমণ রোগের ওপর সবচেয়ে প্রথিতযশা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকদের প্রস্তুত করা বিশেষ গাণিতিক মডেল ব্যবহার করেছেন। ওই মডেল অনুযায়ী, সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বৃটেনে ৫ লাখ ও যুক্তরাষ্ট্রে ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
এই রিপোর্ট প্রকাশের আগ পর্যন্ত দুই দেশের দুই গর্দভ সরকার প্রধান ট্রাম্প ও জনসন বেশ নিষ্ক্রিয় ছিল এই বিষয়ে৷ কিন্তু রিপোর্ট প্রকাশের পর তাদের মতো সাইয়েন্স ইগনোর করতে অভ্যস্ত লোকেরা পর্যন্ত উর্ধ্বশ্বাসে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে৷

ওই একই মডেল ব্যবহার করে মলয় কান্তি মৃধা ও তার দল প্রজেকশন করেছেন যে, সরকার যদি একেবারেই কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বাংলাদেশের ৮১ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ১৩ কোটি মানুষ এই রোগে সংক্রমিত হবে। মারা যাবে ৫ লাখেরও বেশি। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের মাত্রা, মাণ ও আকারের ওপর নির্ভর করবে সংক্রমণ ও মৃতের হার কতটা কমবে। ভারতে একই মডেল ব্যবহার করে ৩০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। একই গাণিতিক মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন ব্যবহার হচ্ছে।
আসন্ন বিপদের ভয়াবহতা সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করতে প্রতিবেদনটি করেছিলেন মলয় কান্তি মৃধা ও তার দল৷ যদিও কনফিডেনশিয়াল রিপোর্টটি শুধু নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রস্তুত করা হয়, এটি পরে সংবাদ মাধ্যম ও ফেসবুকে প্রকাশিত হয়ে যায়। এখন অধ্যাপক মৃধার চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে৷ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু ও ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কয়েকদিন আগে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা রক্ষা ও মুক্ত সমাজ গড়ার জন্য জর্জ সরোসের ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক থেকে বিরাট বড় তহবিল পেয়েছে ব্র্যাক। আজ তারাই একজন হুইসেলব্লোয়ারের একাডেমিক ফ্রিডম কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছে। কারা নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে, তা অনুমেয়।
এখনও সময় আছে এসব থামান। নয়তো চীনের মতো আপনাদেরও একটা কথাও কেউ বিশ্বাস করবে না। চীন না হয় প্রযুক্তি আর এটা-সেটা দিয়ে দমিয়ে রেখেছে, কিন্তু আপনারা পারবেন না। সুতরাং, এখনই সতর্ক হোন। গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন, ঠিক আছে৷ কিন্তু লেজিটিমেন্ট তথ্য প্রবাহ অবাধ রাখুন৷ মানুষ যদি মনে (পারসিইভ) করে যে, সরকার লেজিটিমেট তথ্য ধামাচাপা দিতে চাইছে বা চেষ্টা করছে, তার পরিণতি এই সংকটকালীন সময়ে ভালো হবে না।